রুপম আচার্য্য, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
বিশ্বজুড়েই চলছে লকডাউন। প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাস আতঙ্কে থমকে গেছে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি। এই দুর্যোগে অন্যান্য শিল্পের সাথে পর্যটন শিল্প ও পর্যটন কেন্দ্র চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্থবির হয়ে পড়েছে। লোকসানের মুখে পরেছে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট হোটেল রিসোর্টগুলো।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে এরি মধ্যে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে বড় ধরনের ধ্বস নেমেছে। বন্ধ হয়ে গেছে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হোটেল-মোটেলগুলোতে দেশি বিদেশি পর্যটকশূন্য। প্রশাসনের ঘোষিত লকডাউনে স্থানীয়রা ঘরবন্দি। গেল ৮ মার্চ থেকে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ এবং পরিবহন সেক্টরসহ সবই বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা পড়েছে করোনার কবলে। এতে করে বড় ধরনের প্রভাবে পড়ছে এই শিল্পে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
এই উপজেলায় রয়েছে নামিদামী পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ অসংখ্য ছোট বড় হোটেল -রিসোর্ট কটেজ, গেষ্ট হাউজ। যেখানে সারা বছর জুড়েই আনাগোনা থাকতো অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু, দেশি বিদেশী পর্যটকদের। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশের চিরহরিৎ বন লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে বিরাজ করছে সুনশান-নিস্তব্ধতা।
উল্লেখ্য, অন্যতম পর্যটন নগরী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এক টানা লকডাউনের কারণে পর্যটক শূন্য এখাতের অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পরেছেন। জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চা গবেষনা কেন্দ্র, দৃষ্টি নন্দন চা বাগান, মনু ব্যারেজ, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, মাধবকুন্ড জল প্রপাতসহ সব গুলো পর্যটন কেন্দ্রের একই চিত্র। চলমান এই লকডাউনের পরিস্থিতিতে হতাশ পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
টানা লকডাউনে পর্যটক না আসায় একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব অন্যদিকে পর্যটন নির্ভর জীবিকা নির্বাহকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন ক্ষতির সম্মুখিন।
এদিকে পর্যটন কেন্দ্র গুলোকে ঘিরে গড়ে উঠা জেলার রিসোর্ট ও হোটেল ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন লোকসন গুনছেন।
এ ব্যাপারে গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আরমান খান জানান, বিশ্বব্যাপী লকডাউনে পর্যটন শিল্প বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই বিপুল ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি প্রনোদনা জরুরি। তা না হলে আমাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।
ট্যুরিজম ব্যাবসায়ী শ্রীমঙ্গল ট্যুর গাইড কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস দাশ জানান, আমরা দীর্ঘদিন থেকেই এই ব্যাবসায় জড়িত রয়েছি কিন্তু কখনো এখানকার পর্যটন শিল্পের এমন করুণ অবস্থা আমরা দেখিনি-যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য দেশি বিদেশী পর্যটক প্রতিনিয়ত শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসতেন। তাদেরকে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘুরে দেখানোর দায়িত্ব ছিলো স্থানীয় ট্যুর গাইড কমিউনিটির উপর। এতে করে গাইডদেরও কর্মসংস্থান হতো। কিন্তু এই লকডাউনে ট্যুর গাইডরাও এখন কর্মহীন হয়ে পরেছেন।
টি হ্যাভেন রিসোর্ট এর সত্ত্বাধিকারী ও শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি আবু সিদ্দিক মোঃ মুসা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে আমাদের অসংখ্য অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়েছে। ইতিমধ্যে এই ঈদ মৌসুমে যেখানে শতভাগ বুকিং থাকে। এ পরিস্থিতিতে আমরা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছি না। সরকারি সাহায্য না পেলে আর্থিক লোকশানের মুখে অসংখ্য হোটেল বন্ধ হবার উপক্রম তৈরি হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন।
কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টের পরিচালক রাজর্ষী ধর রাজন বলেন, রমজান মাসে রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যায় ইফতার সামগ্রী বিক্রি করেও রেস্টুরেন্টের সব খরচ মিটানো সম্ভব হতো, কিন্তু টানা লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাতে হয়েছে।
প্যারাডাইজ লজের সত্বাধিকারী আবুজার রহমান বাবলা বলেন, মার্চের ৮ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত হোটেল টানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। ফলে বিল্ডিং ভারা, স্টাফ, ইলেক্ট্রিসিটি, গ্যাস, ইন্টারনেট লাইন মিলে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি যদি আরো দীর্ঘদিন হয় তাহলে আমাদের মতো ব্যাবসায়ীদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে।
Leave a Reply