নারী উদ্যোক্তা সৃস্টি ও উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহায়তা, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, নিজ পরিচয়ে পরিচিত হওয়া ও নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পুরান বাজারে অবস্থিত খান’স ধাবায় ২৬শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ ইং সালে চাঁদপুরের নারীদেরকে নিয়ে একটি নারী উদ্যোক্তা সংগঠন বিজয়ী প্রতিষ্ঠা করি।
আলহামদুলিল্লাহ দীর্ঘ দুই বছর ফ্রি প্রশিক্ষনসহ নানা রকম সামাজিক কার্যক্রম করে নভেম্বর ২০২২ ইং সালে বাংলাদেশ মহিলা অধিদফতর থেকে “বিজয়ী” – নারী উন্নয়ন সংস্থা নামে(রেজিষ্ট্রেশন নং- জেমবিককা/চাঁদ/ ১৫৩)) নিবন্ধন পাই।
সংগঠনের নামঃ “বিজয়ী” (নারী উন্নয়ন সংস্থা)
স্লোগানঃ আমরা নহে দেবী, নহে সামান্য নারী আমরা নারী, আমরাই পারি, আমরাই বিজয়ী…
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
“বিজয়ী তৈরিতে বিজয়ী” এই স্লোগানে নারীদের ফ্রি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে বিভিন্ন হাতের কাজের প্রশিক্ষন দিয়ে তাদের তৈরি পণ্য প্রদর্শন ও বিপণনের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল ও আর্থিক স্বাবলম্বী করা।
সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা।
অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীর মাধ্যমে নারীর সামগ্রীক ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া ত্বরাম্বিত করে লিঙ্গ সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য বাংলাদেশের সমাজ বাতাবরণের উপযোগী একটি অনন্য উদ্যোগ “বিজয়ী” এর।
“বিজয়ী” প্রথমে চাঁদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সম্প্রসারিত করে সমগ্র দেশব্যাপী একটি নারীবান্ধব আলাদা বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে।
উন্নত বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু গৃহিণী নয়, বরং নিজের সাহসী চেষ্টায় একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেই লক্ষ্যে কাজ করছে বিজয়ী।
নারী-পুরুষে ভেদাভেদ দূর, দেশকে এগিয়ে নেয়া এবং রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরি। নারীকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে দেশে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের সহায়তার বিকল্প নেই। তারই ধারাবাহিকতায় বিজয়ী চাঁদপুরের নারীদের নিয়ে কাজ করা প্রথম ফ্রি প্রশিক্ষন বেইজ নারী সংগঠন।
চাঁদপুরসহ সারাদেশে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, সুষ্ঠুভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা, সম্প্রসারণে সার্বিক সহায়তা প্রদান, দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অবদান রাখাসহ নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করা।
করোনার সময় থেকে বিজয়ী এর উদ্যোগে প্রথম অনলাইন বেইজ ট্রেনিং শুরু হয় এবং করোনার প্রকোপ কমে আসায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হওয়ায় এখন বিজয়ী অফলাইনে হাতে কলমে কাজ শিখানো আরম্ভ করে। এই ট্রেনিং গুলো সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করে আজ অনেক নারীই নতুন উদ্যোক্তা হয়েছেন।
নারী উদ্যোক্তাদের প্রধান সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে বিজয়ী –
প্রশিক্ষণঃ প্রশিক্ষনই উদ্যোক্তা হওয়ার মূল চালিকা শক্তি।
নারী উদ্যোক্তাদের অবশ্যই ব্যবসা শুরু থেকে সফলভাবে পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষনের কোন বিকল্প নেই।২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই দুই বছরে নারীদের স্বাবলম্বী করতে তাই বিজয়ী প্রতি নিয়তই নানা রকম ফ্রি প্রশিক্ষন প্রদান করে যাচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য প্রশিক্ষন-
১.উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় ও ব্যবসা পরিচালনা কৌশল – নিলুফার করিম,এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর, ফেইথ বাংলাদেশ।
২.বেসিক স্কিন কেয়ার এবং হেলদি লাইফ স্টাইল – তাহমিনা মীম, চেয়ারম্যান এম এফ ইউ ট্রেডিং কোম্পানি।
৩. অনলাইন নেটওয়ার্ক মাকেটিং – ডাঃ ওমর ফারুক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম্যাক্স ওয়ান ইন্টারন্যাশানাল।
৪.বেসিক কেক বেকিং – তানিয়া ইশতিয়াক খান/ সীমা খান
৫.হ্যান্ড মেইড হেড পিস – আসফিয়া জাহান
৬.হ্যান্ড পেইন্ট কাঠের জুয়েলারী – মার্জিয়া মৌরি
৭.হ্যান্ড মেইড জুয়েলারী তাহমিনা মীম
৮.বেসিক বাটিক তৈরি – তানজিলা রহমান ইলা
৯. বেসিক ব্লক তৈরি – উম্মে হানী
১০. বেসিক ব্রাইডাল মেক ওভার ও স্কিন কেয়ার- পুষ্পিতা পুষ্প
১১.হ্যান্ড মেইড মেটাল জুয়েলারী – ফাতেমা খন্দকার কাশফি
১২.পিৎজা তৈরি – জাহানারা খন্দকার নেহা
১৩. বেসিক কেক বেকিং – মাহমুদা আক্তার
১৪. ফাস্টফুড – নিলুফার ইশতিয়াক
১৫. বিডীদ ক্রাফ্ট- সূচনা আক্তার।
১৬. ফ্লোরাল জুয়েলারী – উম্মে হানী ও নীলা খান।
১৭. বিডীদ হ্যান্ডি ক্রাফ্ট – জান্নাতুল জিদনী।
১৮. হ্যান্ড মেইড হিজাব ব্রোজ -ইশরাত জাহান শশী
১৯.পেশাজীবি নারীদের সুস্বাস্হ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা- পুষ্টিবিদ এরশাদ খান সালমান
অর্থের অভাব দূর করনঃ ব্যবসা পরিচালনা করতে অর্থের অভাব দূর করার লক্ষ্য বিজয়ী এর সহযোগিতায় নারীদের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে স্বল্প ইন্টারেস্ট লোনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। চাঁদপুরের নারীদের ব্যাংক লোনের বিষয়ে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট দিয়েছেন বেসিক ব্যাংক, চাঁদপুর শাখা।
মানসিক শক্তির অভাব দূরকরনঃ উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন মানসিক সাপোর্ট যা আমাদের দেশের নারীদের মধ্যে অভাব। আর এই সাপোর্ট দেওয়ার জন্য কাজ করছে বিজয়ী।
বিপণন সহায়তা প্রদানঃ
সীমিত চলাফেরার কারণে নারীরা তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন না। অর্থনৈতিক পরিবেশে তাদের পণ্য সফলভাবে বাজারজাত করতে সহায়তা করার জন্য “বিজয়ী” ফেইসবুক গ্রুপে প্রায় ৯ হাজারের বেশী সদস্য রয়েছে যাদের কাছে ঘরে বসেই অনলাইনে ফ্রিত পন্য কেনা বেচা করতে পারছে। এছাড়া চাঁদপুর পৌরসভার মাননীয় মেয়র নারী উদ্যোক্তাদের পন্য অফলাইনে বিক্রয়ের জন্য একটি শোরুমের ব্যবস্থা করে দিবেন এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিজয়ী এর নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স করতে শুধু মাত্র সরকারি ফি রাখেন চাঁদপুর পৌরসভা মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল।
পারিবারিক সীমাবদ্ধতা দূরকরনঃ
পারিবারিক সীমাবদ্ধতা দূর করনের লক্ষ্যে উদ্যোক্তাদের পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা করে কাউন্সিলিং করেন বিজয়ী। বর্তমান ডিজিটাল যুগে নারীরা ঘরে বসে পর্দা মেইনটেইন করে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।নারীরা Tension (দুচিন্তা) নয় বরং Ten Sons (দশজন পুত্রের) সমান।
যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি নির্বাচনে সহায়তা প্রদানঃ
যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি নির্বাচনে নারীদের সহায়তা প্রয়োজন। তাদের প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলিতে সহায়তা প্রদানের জন্য বিসিক ও যুব উন্নয়ন থেকে নানা রকম প্রশিক্ষনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিচ্ছে বিজয়ী।
উদ্যোক্তাদের সাবলম্বী করতে নানা রকম সহয়তা প্রদানঃ বিজয়ী থেকে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের “বিজয়ী অ্যাওয়ার্ড” এর মাধ্যমে সনদপত্র ও সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তাদের সাবলম্বী করতে বিজয়ী এর প্রেসিডেন্ট খালেদা ইয়াসমিন রুবি নিজ খরচে সেলাই মেশিন প্রদান করেন। এছাড়া শুধু অনলাইন নয় অফলাইনে পন্য বিক্রয়ের জন্য মেলার আয়োজন করে সেখানে উদ্যোক্তাদের ফ্রি স্টল প্রদান করে অফলাইনে পন্য ডিসপ্লে ও সেলস এর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বিজয়ী।
তাছাড়া তানিয়া ইশতিয়াক খানের উপস্থাপনায় “উদ্যোক্তা গল্পকথন” নামে সাক্ষাৎকার বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করা সহ লাইভে তাদের পন্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারনার ব্যবস্থা করা হয় বিজয়ী এর মাধ্যমে।
বাংলাদেশ গনপ্রজাতন্ত্রী সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ করছি-
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হল প্রশিক্ষন। আমাদের স্কুলগুলোতে শারিরীক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন হাতের কাজের প্রশিক্ষন নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ১ টি ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে, লেখা পড়ার পাশাপাশি সবসময়ে নারীরা ঘরে বসে বিভিন্ন পন্য তৈরি করতে পারবে আর স্কুল লাইফ থেকে সে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারবে। এছাড়া সরকারি সহযোগিতা, নারী উদ্যোক্তাবান্ধব বাজেট থাকলে নারীরা সফলভাবে বিনিয়োগে আসবেন, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত হিসাবাদি, জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স, ব্যাংক ঋণ, বিএসটিআই অনুমোদন, ট্রেড লাইসেন্সের কাজ সহজীকরণ করলে এবং সেই সাথে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনীর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত কিছু প্রদর্শনী বা মেলার আয়োজন করলে তারা তাদের কাজ সামনে তুলে ধরতে পারবেন। তাতে করে আমাদের উদ্যোক্তাদের পণ্য সামনা সামনি সবাই দেখতে পারবেন এবং এতে করে নেটওয়ার্কিং-এর একটা প্ল্যাটফর্মও তৈরি হয়। তাই একটা প্রত্যাশা রেখে শেষ করছি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কেবল শুধু বরাদ্দই নয়, একটি সুন্দর ও সুস্থ নারী উদ্যোক্তাবান্ধব অর্থনীতি তৈরি করতে প্রয়োজনীয় রূপরেখা ও দেশের অর্থনৈতিক বাজেট প্রণয়নের সময় অর্থনীতির পালে নারী উদ্যেক্তারা যে হাওয়ার যোগান দেন সেটিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে, আমলে নিতে হবে।
ধন্যবাদান্তে
তানিয়া ইশতিয়াক খান
প্রতিষ্ঠাতা
“বিজয়ী” (নারী উন্নয়ন সংস্থা)
ফোন নং – 01736860568, 01670907970
E-mail:bijoyibd@gmail.com
Website:www.bijoyi.org
Leave a Reply