গতকাল(২৮ জুলাই) ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৯৯৩ জন, উত্তীর্ণ হয়েছে ২৮৫৮ জন এবং পাসের হার ছিল ৭২.৬৬ %।অপরদিকে উপজেলা থেকে মোট জিপিএ-০৫ পেয়েছে ১২৮ জন।অন্যান্য বছরের তুলনায় অধিকাংশ স্কুলে পাসের হার কম ছিল। ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন স্কুলে ২০ জন থেকে শুরু করে ১০০+ পর্যন্ত শিক্ষার্থী ফেল করেছে। তবে শতভাগ পাসের গৌরব অর্জন করেছে, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—শাশিয়ালি উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুর বাজার মজিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দ্রা আ: হাকিম চৌধুরী মো: বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং কেরোয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।অপরদিকে পাসের হার সর্বনিম্ন এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে —সোনালি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়(৩৯.৪৭%),লাউতলি ডা. আব্দুর রশিদ আহম্মদ স্কুল এন্ড কলেজ(৪৪.৪৪%) এবং পূর্ব বড়ালি শাহজাহান কবির উচ্চ বিদ্যালয়(৪৫.৪৫%)। তাছাড়া জিপিএ-০৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে এগিয়ে আছে— চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ(১১জন),ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়(১০জন) এবং সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয়(১০জন)। তাছাড়া ফেলের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য স্কুলের জিপিএ-০৫ এর সংখ্যা: ফরিদগঞ্জ আদর্শ একাডেমি(৬ জন,) রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়(০৪ জন), পাইকপাড়া ইউ জি উচ্চ বিদ্যালয়(০৩ জন), খাজুরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়(০৪ জন), গাজিপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়(০৩ জন) এবং বালিথুবা আব্দুল আমিদ উচ্চ বিদ্যালয়(০৫ জন)। বিভিন্ন ফলাফল খারাপ হওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
আমার দৃষ্টিতে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ:
১/ পরীক্ষার হলে নকল যাবে, সেই প্রত্যাশায় অনেকেই পড়াশোনা করেনি।
২/ ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সাথে গল্পগুজব চলত, পাঠ্যপুস্তক নিয়ে আলোচনা খুবই কম হত।
৩/ শিক্ষার্থীরা ক্লাসে দুষ্টুমি করত, প্রাইভেট পড়লেই সাত খুন মাফ।
৪/ শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়ত, স্কুল পরীক্ষার আগে শর্টকাট সাজেশন পেয়ে স্কুল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করত। ফলে প্রস্তুতি দুর্বল ছিল।
৫/ প্রাইভেট পড়লে স্যারে তো পাস করিয়ে দেয়-ই, তাহলে পড়াশোনা নিষ্প্রয়োজন।
৬/ শিক্ষার্থীরা প্রচুর প্রাইভেট পড়ত কিন্তু বাসায় পড়ত না। ফলে তারা এই সময় টিকটিক,ফেসবুক এবং ইউটিউবে দিত। অভিভাবক এটাকে ইতিবাচকভাবে নিত।
৭/ স্কুল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে, যা মূলত স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ার কারণে করেছে। কাগজ দেখার ক্ষেত্রে দুর্বলতা ছিল(সব শিক্ষক এই দোষে দোষী নয়)।সেই রেজাল্ট দেখেই অভিভাবক সন্তুষ্ট ছিল।
৮/টেস্ট পরীক্ষায় ৪/৫ বিষয়ে ফেল করা সত্ত্বেও অধিক টাকার লোভে পাস করার অনুপযোগী শিক্ষার্থী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। যার জন্য অভিভাবক,স্কুল কমিটি এবং শিক্ষক সবাই দায়ী।
শিক্ষার মানোন্নয়নে আমার পরামর্শ:
১/ ক্লাসে পড়াশোনা হয় কি-না, অভিভাবককে খোঁজখবর নিতে হবে।
২/ ক্লাসে পড়া আদায়ের ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে।একজন ভালো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সবসময় ক্লাসে ও বাড়িতে ব্যস্ত রাখে।
৩/ সন্তানের হাতের এন্ড্রয়েড ফোন সবসময় চ্যাক করতে হবে এবং সীমিত সময় ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার না করলে বেস্ট।
৪/ সন্তান আড্ডা দেয় কাদের সাথে, সেটা দেখভাল করা প্রয়োজন।
৫/ সন্তান প্রেমরোগে আক্রান্ত কি- না, তা দেখার দায়িত্ব অভিভাবকদের।
৬/ স্কুল কমিটিতে সচেতন এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের রাখতে হবে।
৭/ টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট দেখেই বুঝা যায়, কারা পাস করবে। সেটা দেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮/ টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ অযোগ্য শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পাঠানোর ক্ষেত্রে শিক্ষকদের উপর চাপাচাপি করা যাবে না। তাছাড়া প্রতিষ্ঠান/ শিক্ষক ভালো না কি মন্দ, সেটা জিপিএ-০৫ দিয়ে বিবেচনা করা অনুচিত।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় যেসব সম্মাননীয় শিক্ষক পড়ান, তারা দক্ষ এবং মেধাবী। তাদের কাছে পড়ে অনেকেই জিপিএ-০৫ পেয়েছে এবং দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । আবার অনেকেই ভালো রেজাল্ট করেনি, এটা শিক্ষকদের ত্রুটি নয়।যারা ভালো রেজাল্ট করেনি, তারা পড়াশোনা করেনি এবং অভিভাবক অসচেতন। তাই সবমসময় শিক্ষকদের দোষ দেওয়া অনুচিত। শিক্ষকদের সাথে অভিভাবকদের সুসম্পর্ক এবং নিয়মিত যোগাযোগ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে স্ট্রং ভূমিকা পালন করবে।মনে রাখা উচিত, শিক্ষকবৃন্দের দিকনির্দেশনা, শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অভিভাবকবৃন্দের সচেতনতার সংমিশ্রণ হলো ভালো রেজাল্ট। আমি সবসময় বলি— জিপিএ -৫ মানেই সবসময় ভালো শিক্ষার্থী নয়,আর খারাপ রেজাল্ট মানেই দুর্বল স্টুডেন্ট নয়।
রাসেল ইব্রাহীম
লেখক ও গীতিকার
Leave a Reply