রুপম আচার্য্য, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :
বৈশাখ মানেই মাসজুড়ে মেলা। যা ঘিরে সারা বছর চলে মৃৎশিল্পীদের প্রস্তুতি। বাঙ্গালি ও বৈশাখি মেলা যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। বৈশাখী মেলার জন্য শখের হাঁড়ি, সরা, পুতুল তৈরি করে রেখেছিলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর খেয়ে পড়ে বাঁচার জন্য তৈরি করেছিলেন যে পণ্য করোনার কারণে তা এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। মাটির এই সামগ্রী বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পরেছে মৃৎশিল্পীরা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুমার পাড়ার ৭ টি পরিবার এখন মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। প্রায় ২ লক্ষ টাকার মতো মাটিসামগ্রী বিক্রি করতে না পেরে হতাশা ও চরম দুশ্চিন্তায় আছে।
দেশব্যাপী লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। জনসমাগম এড়াতে বৈশাখীর সমস্ত উৎসব বন্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোথায়ও ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আসর কোথাও দেখা যায়নি। মৃৎশিল্পীরাও বর্তমান করোনা মোকাবেলায় তাদের তৈরীকৃত সামগ্রী নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বৈশাখকে ঘিরে তাদের যত স্বপ্ন যেন ভেঙ্গে গেছে।
এ সময় রাণী মৃৎশিল্প কারখানার স্বত্বাধিকারী বীণা পাল বলেন, আমরা দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত এই পেশায় আছি। এই কাজে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলছি। তার পরিবারের সব সদস্যই মৃৎশিল্পী। দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ এর উপরে মাটির বিভিন্ন রকমের সামগ্রী তৈরি করে তার পরিবার। কেউ অন্য কোনো কাজ করে না। তাই ঘরে তার অনেক মালামাল জমা হয়ে গেছে। হাট বাজার বন্ধ, বৈশাখী উৎসব ও মেলা কোথাও নেই। আমরা কি করবো? ভেবে কুল পাচ্ছি না। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সরকার আমাদের দিকে যদি একটু সুদৃষ্টি দিতেন তাহলে এই পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনরকমে বেঁচে থাকা যেত।
এ সময় জ্যোতির্ময় পাল, ভুপেন্দ্র পাল, নিপেন্দ্র পাল, বকুল পাল, রঞ্জন পাল, অঞ্জু পাল, কানু পাল তারা বলেন, করোনার প্রভাবে তাদের সমস্ত তৈরিকৃত মালামাল আটকা পড়েছে। এসব সামগ্রী তারা কোথাও বিক্রি করতে পারছে না। এছাড়াও চলতি বৈশাখী মেলার জন্য অতিরিক্তি মাটির হরেক রকমের সামগ্রী আটকা পড়েছে। কোথাও মেলা উৎসব না থাকায় কিছুই করতে পারছে না তারা। তারা এখন দুশ্চিন্তায় ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। এই বিপর্যয়ের সময়ে অনেকে খাবার সংকটেও পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের সন্ধ্যানী আবাসিক এলাকার কুমার পাড়ায় বেশ কিছু মৃৎশিল্পী আছে। তাদের তৈরিকৃত হাজার হাজার মাটি সামগ্রী এখন বাড়িতে আটকে আছে বিনষ্ট হচ্ছে মৃৎসামগ্রী। করোনার এই সময়ে মৃৎশিল্পীরা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
তারা আরো বলেন, আমরা শুনেছি সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের এখনো খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় নাই। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা হতাশার কথাই জানিয়েছেন।
এ সময় লক্ষ্য করা গেছে, বাড়ির প্রতিটি পরিবারই নির্ভরশীল এই শিল্পর ওপরে। সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি নারীরাও মাটির সামগ্রী বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। আঠালো মাটি দিয়ে নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছে তারা এককেটি মাটির আসবাবপত্র। তবে এখানে তারা মাটির হাড়ি ও খোড়া বেশি বানিয়ে থাকেন। মাটির এসমস্ত সামগ্রী বানিয়ে করা রোদে শুকাতে দিচ্ছে। তার পরে শুকানো হলে ছোট্র ঘরের সাড়িবদ্ধভাবে মাটির সামগ্রী গুলো রেখে খরকুটা কিংবা নাড়ার আগুনে পুড়িয়ে পাকা করছে। পুড়া হলে এসব সামগ্রীতে হাতে রং করে। এরমধ্যে কয়েকটি পরিবার তাদের তৈরিকাজ বন্ধ রেখেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি প্রয়োজনে সেখানে যাবো, গিয়ে তাদের সাথে আলাপ করে দেখবো, প্রয়োজন হলে সরকারি ত্রান তাদেরকে দিব। সরজমিনে গিয়ে যদি দেখি তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তাহলে আমরা যতাযত ব্যবস্থা নিব।
Leave a Reply