ভাষা, শব্দটির সাথে আমরা অতি পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হরেক রকমের ভাষার প্রচলন রয়েছে।
মাতৃভাষা হচ্ছে মায়ের ভাষা। মাতৃভাষাকে আবার বলা হয় First Language অর্থাৎ প্রথম ভাষা। জন্মের পর থেকে একটি শিশু তার মায়ের কাছ থেকে প্রথম যে ভাষায় কথা বলতে শিখে তাকেই বলে মাতৃভাষা। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ আমরা। এবার এই বাংলা ভাষা, মাতৃভাষা হওয়ার পেছনের ইতিহাসটা বিশাল।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। এর দুটি অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান। আমরা বাংলাদেশের মানুষরা ছিলাম পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে ছিল শাসন ক্ষমতা, কিন্তু শাসকের ভূমিকার চেয়ে শোষকের ভূমিকাই বেশি পরিলক্ষিত হয়।
পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাভাষীদের উপর উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল, রাষ্ট্রভাষা উর্দু হোক। কিন্তু পাকিস্তানের মাত্র ৪ শতাংশ মানুষের ভাষা ছিল উর্দু। অন্যদিকে ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলতো। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা ভাষার দাবিতে রাজপথে নামে। শুরু হয় আন্দোলন, যা ইতিহাসের পাতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে সমগ্র দেশে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার করা হয়। ১৪৪ ধারাকে পরোয়া না করে তৎকালীন ছাত্রসমাজ বিক্ষোভ মিছিল করে। নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ, শহিদ হন বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে।
১৯৫২ সালের এই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই ভাষা আন্দোলনের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সমগ্র জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। অর্জিত হয় স্বাধীনতা, বাংলা ভাষা পায় তার যথাযথ মর্যাদা।
যাদের জন্য এ অর্জন সম্ভব হয়েছে, তারা আর কেউ নন বাংলার আপামর জনসাধারণ, বাঙালি। পৃথিবীর এমন কোন দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনায় ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করার ইতিহাস নেই, আছে শুধু বীর বাঙালির।
লেখকঃ শিক্ষার্থী অনার্স ৩য় বর্ষ(উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ) চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর।
“আমরা বীর বাঙালি” আফসানা আক্তার তন্নি

Leave a Reply